ছাত্রদের মাথা ঠান্ডা রাখতে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হলো নতুন এক চ্যাপ্টার
ওদের অনেকেরই সামান্য কথাতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। ওরা সবাই কিশোর কিশোরী (Teenagers)। ওরা সবাই স্কুলের উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থী। ওদের বয়স কিন্তু খুব একটা বেশী নয়। কারোর হয়তো ১৪-১৫ বছর, কারোর সামান্য বেশি, ১৬-১৭ বছর। খুব বেশী হলে ১৮ বছর হবে। ঝগড়াঝাঁটি থেকে শুরু করে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে চলেছে শুধুমাত্র মাথা গরম করার কারণে। আবার ক্ষেত্রবিশেষ এ দেখা যাচ্ছে ঘটছে নানা মারাত্মক ঘটনা যেখান থেকে মৃত্যুও পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে।
শিক্ষার্থীর বাড়িতে মা-বাবা আর তার বাড়ির বাকি বড়রা,এমনকি শিক্ষক, শিক্ষিকারা সবাই তাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখার কথা বলেছেন সেটা একদম ঠিক কথা। কিন্তু কি ভাবে যে মাথা ঠান্ডা রাখা যেতে পারে সেটা শিক্ষার্থীরা অনেকেই সেইভাবে জানেননা। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যক্রমে (syllabus) জায়গা পেয়েছে কি উপায়ে মাথা ঠান্ডা রাখা যায় সেই বিষয়ের একটি অধ্যায়। একাদশ শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শরীর শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ঘটানো হয়েছে কিছু পরিবর্তন।
পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে ‘আবেগ সামলানোর দক্ষতা’ নামক একটি অধ্যায়। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কথা অনুযায়ী আমাদের দেশের মধ্যে কেবলমাত্র বাংলাতেই জীবনশৈলী পাঠের গুরুত্বকে মাথায় রেখে পাঠ্যক্রম তৈরির কাজ সব থেকে বেশি হয়েছে। এই বইয়ের একজন অন্যতম সম্পাদক ও শিক্ষক দীপেন বসুর মতে ‘বয়ঃসন্ধিকালে পড়ুয়ারা ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে যে সব বিষয়ের সম্মুখীন হয়’, ঠিক সেই বিষয়গুলিকেই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।
নতুন পাঠ্যক্রমে আলোচনা করা হয়েছে কি ভাবে নানা উপায় অবলম্বন করে মাথা ঠাণ্ডা রাখা যায়। তার সাথে রাগ, দুঃখ, অভিমান, ইত্যাদি ভুলে কি ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকা যায় তার সহজ উপায়। তার সাথে আরও রয়েছে কিভাবে মানুষের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা যায় তার কিছু সহজ উপায়। এই সব কিছু দিয়েই তৈরি একটি অন্য রকম নতুন অধ্যায়।
টাকি বয়েস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক তার নিজের একটি মতামত দিয়েছেন সেটি হল, ‘আজকাল বহু বাচ্চা একটুতেই খুব অধৈর্য হয়ে পড়ছে। প্রায় সারাক্ষণই মাথা গরম করে ফেলছে। মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি এ সব খুবই বেড়ে গিয়েছে ক্লাসে। এমনকী, পড়ুয়াদের একাংশ নেশার কবলেও পড়েছে। ওদের সঠিক পথের দিশা দিতে এই ধরনের সিলেবাসের খুবই প্রয়োজন ছিল।’ প্রধান শিক্ষিকার কথাকে গুরুত্ব দিয়েই সিলেবাসে কিছু কিছু নতুন বিষয় (topic) যোগ করা হয়েছে যেমন যোগাসন, বিভিন্ন রকম খেলা, বিভিন্ন রকম সংস্কৃতি ভিত্তিক কাজ , সঠিক সময় ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠা, সামাজিক বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্যর মতামত অনুযায়ী, ‘বহু ছেলেমেয়ের মধ্যে দেখছি, অন্যের চোখে নিজেকে প্রমাণ করার দায় খুব বেশি। আর সেটা যখনই মনমতো হচ্ছে না, তখনই ওদের আবেগ একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবেগকে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে বহু ছাত্রছাত্রীই বিপথে যাচ্ছে, প্রাণঘাতী আচরণ করছে এবং অঘটনও ঘটছে। সে সবই নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।’
যে কোনো রকম কঠিন পরিস্থিতিতে কি ভাবে নিজেকে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, কল্পনার জগৎ আর বাস্তব জগৎ যে একদম আলাদা সেই সমস্ত কিছুই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে এই বইয়ের পাতায়। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যে সাহস আর আত্মবিশ্বাস দরকার হয় সেটাও কিভাবে শিক্ষার্থীরা পাবে সে সব আলোচনা করা হয়েছে এই পাঠ্যক্রমে।