Dooars Jungle Tour: এই গরমে ঘন জঙ্গলের শীতল ছায়ায় কটা দিন অ্যাডভেঞ্চার করতে চান? তালিকায় রাখুন ডুয়ার্সের এই জায়গাগুলি
Dooars Jungle Tour: আপনি কি ভ্রমণ প্রিয় একজন মানুষ? বিভিন্ন মরশুমে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন? তাহলে আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।
বর্ষার আগের এই সময়টাই জঙ্গল ঘোরার সব থেকে আদর্শ সময়। কারণ জুন মাস থেকে জঙ্গল প্রায় তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকে। তাই বর্ষার আগের সময়টাই জঙ্গল ঘোরার জন্য সঠিক সময়। এই সময়টা জীবজন্তুরাও খোলা জায়গায় বেশি ঘোরাঘুরি করে। ফলে জীবজন্তুদের দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও নদীর পাড়ে যখন পশু পাখিরা জল খেতে আসে সেই সময় তাদের দেখতে পাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। আসুন তাহলে কিছু টুরিস্ট স্পট সম্পর্কে আমরা জেনে নিই যেগুলি আপনার এই মরশুমের গন্তব্যস্থল হতে পারে।
বক্সার জঙ্গল ও ফোর্ট (Buxa Forest And Buxa Fort):
বক্সার পাহাড়কে পুরোপুরি ঘিরে এই বক্সার অরণ্য। এই বক্সার অরণ্যের পথ আগের মতো এখনও দুর্গম। দুই দিক ঘন অরন্যে ঢেকে আছে। বক্সার যে দুর্গ ছিল এখন তা ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই দুর্গে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী বহু বছর বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। এই অরণ্যে দিনের বেলাতেও যেন গা ছমছম করতে থাকে। ঘন অরণ্যের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে বক্সা যাওয়ার পথ। এরপর জয়ন্তী ছাড়িয়ে সান্তালাবাড়ি পর্যন্ত চলে যান। সেখানে প্রচুর থাকার জায়গা পাবেন। সেখানে গাইড নিয়ে জঙ্গলের চারপাশটা ভালো করে ঘুরে দেখুন। বক্সায় যেতে চারিদিকে প্রচুর রকমের খাবারের দোকান পাবেন।
এখানে সব থেকে আকর্ষণীয় হল বক্সা দুর্গ। ডুয়ার্সে আক্রমণ চালানোর জন্য এই দুর্গ তৈরি করেছিল ভুটানিরা। পরে এই দুর্গটি ব্রিটিশদের নজরে আসে এবং ব্রিটিশরা দ্বিতীয় ভুটান যুদ্ধের শেষে এই দুর্গটি পুরোপুরি ভাবে নিজেদের আয়ত্তে করে নেয় এবং এটিকে জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করে। এই জেলখানাটিকে অনেকে আন্দামানের সেলুলার জেলের থেকেও ভয়ঙ্কর হিসেবে দাবি করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এখানে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন।
লেপচাখা (Lepchakha):
বক্সা জঙ্গল থেকে খানিকটা উপরে এই লেপচাখা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। নির্জন নিরিবিলিতে একদিন এখানে কাটাতে পারেন। এখানে বেশ কিছু থাকার জায়গা রয়েছে।
ভুটান ঘাট (Bhutan Ghat):
এরপর আপনার পরবর্তী গন্তব্যস্থল হবে ভুটানঘাট। অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা কাজ করে এই পুরো গোটা এলাকাটা জুড়ে। হাতিপোতা হয়ে ভুটান ঘাট পর্যন্ত সব সময় পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।
জয়ন্তী জঙ্গল (Jayanti Forest):
জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি বুক করে নিন। এরপর আপনার গন্তব্য সোজা জয়ন্তী। চেকপোস্ট থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তা দুই দিকে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একটা রাস্তা চলে যাচ্ছে বক্সা ফোর্ট আর একটা চলে যাচ্ছে জয়ন্তী। এখানে নানা ধরনের পশুপাখি আপনি দেখতে পাবেন। বাঘ, হাতি, ক্লাউডেড বুনো কুকুর ইত্যাদি আপনি দেখতে পাবেন। এরপর সামনেই দেখতে পাবেন পুখুরি পাহাড়। বর্ষাকালে জয়ন্তী নদী বিশাল এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এর ফলে কখনও কখনও এখানে বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর আপনাকে হেঁটে উঠতে হবে মহাকাল মন্দির। মহাকাল মন্দিরে উঠবার জন্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী সিঁড়ি
আছে।
নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান (Neora Valley National park):
এই জাতীয় উদ্যানটি কালিম্পং জেলায় অবস্থিত। ৮৮ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বনাঞ্চল ১৯৮৬ সালে জাতীয় উদ্যানের তকমা পায়। এখনকার মূল আকর্ষণ হল রেড পান্ডা যেটি বর্তমানে বিরল। এই জাতীয় উদ্যানের বহু জায়গাতেই সূর্যের আলো দিনের বেলাতেও পৌঁছায় না। এই বনাঞ্চল খুবই দুর্গম। তাই প্রকৃতি প্রেমিক এবং পর্যটকদের কাছে এটি প্রায় স্বর্গের সমান। নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের বনপথে ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সবথেকে সমৃদ্ধ জাতীয় উদ্যান। আফ্রিকার আমাজনের জঙ্গলের কিছুটা স্বাদ আপনি এখানে পেতে পারেন।
গরুমারা জাতীয় উদ্যান (Gorumara National park):
এই বনাঞ্চলটি একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। এই বনঞ্চলটি ১৮৯৫ সালে জাতীয় উদ্যান এর তকমা পায় এবং ১৯৪৯ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এই গরুমারা অভয়ারণ্যে ১৯০ এর বেশি প্রজাতির পাখি, ৫০ রকম প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫ রকম প্রজাতির মাছ, ২০ রকম প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৭ রকম প্রজাতির কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়। কখনও কখনও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মেলে। বিভিন্ন রকমের বিচিত্র পাখি যেমন মৌটুসি, কেশরাজ, সিঁদুরে সহেলি, শাহ বুলবুল, কাঠঠোকরা, মথুরা, ভারতীয় ধনেশ এখানে দেখতে পাওয়া যায়। আরও অনেক ধরনের পরিযায়ী পাখি এই জাতীয় উদ্যানে আসে। বিরল প্রজাতির প্রাণী পিগমি হগ এবং হিডপিড খরগোশ এখানে দেখা যায়।
পাতলাখাওয়া অভয়ারণ্য (Patlakhaoa National park):
এটি জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের একটি অংশ। একসময় কোচবিহারের রাজা মহারাজারা এই জঙ্গলে শিকারে যেতেন। আগে এই অঞ্চলেও গন্ডারের দেখা পাওয়া যেত। পরে এখান থেকে গন্ডাররা জলদাপাড়া জঙ্গলের দিকে চলে যায়। পরে অবশ্য বনদফতরের তরফ থেকে এই পাতলাখাওয়া বনাঞ্চলকে গন্ডার এর আবাসস্থল করা হয়েছে। তবে গন্ডার ছাড়াও এই জঙ্গলে গাউর, চিতা বাঘ, হরিণ ইত্যাদি জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই জঙ্গলের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ হল তোর্সা নদী।